ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সিলেটে পুলিশের লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে ফেরত না পাওয়া অস্ত্র নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আর সে উদ্বেগের মাত্রায় ঘি ডেলেছে লাইনেন্সকৃত কিছু অস্ত্র, যেগুলো এখনও জমা হয়নি। সিলেটে শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া ২১টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং লাইনেন্স করা ৩৬টি অস্ত্র জমা হয়নি। ফলে এগুলো উদ্ধারে জোরেশোরেই মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, সিলেট মহানগরের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া ১০১টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ২১টি এবং গত ১৫ বছরে লাইসেন্স করা ২৪৬টি অস্ত্রের মধ্যে জমাযোগ্য ৩৬টি অস্ত্র এখনো জমা হয়নি। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার মধ্যে এসব অস্ত্র নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পুলিশ সূত্র ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের পর সিলেট নগরের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট হয়েছিল ১০১টি। সঙ্গে গোলাবারুদও লুট হয়েছিল। এর মধ্যে বুধবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত জমা ও উদ্ধার হয়েছে ৮০টি। তবে গোলাবারুদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে এখনো ২১টি অস্ত্রের সন্ধান পায়নি পুলিশ।
এছাড়া গত ১৫ বছরে মহানগর এলাকায় অস্ত্রের লাইসেন্স করা হয়েছে ২৪৬টি। এর মধ্যে লাইসেন্স নিয়েও অস্ত্র কেনেননি ১০ জন। এর বাইরে ৪৩টি অস্ত্র বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত হয়। মহানগর এলাকায় জমাযোগ্য অস্ত্রের সংখ্যা ১৯৩। এর মধ্যে জমা হয়েছে ১৫৭টি। জমা হয়নি ৩৬টি আগ্নেয়াস্ত্র।
সূত্র জানায়, লুট হওয়া ও লাইসেন্স করা অস্ত্রের তালিকা প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে অভিযান চালানোর কথা ছিল। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়নি।
সিলেট কোতোয়ালি পুলিশ জানায়, তাঁর থানা থেকে লুট হওয়া একটি পিস্তল, লামাবাজার ফাঁড়ি থেকে একটি শটগান, বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে একটি রাইফেল ও একটি শটগান এখনো ফেরত আসেনি। এ ঘটনার পর একাধিকবার মাইকিং করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সিলেট জমা যোগ্য অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ৫৪৪। এর মধ্যে জেলা পর্যায় রয়েছে তিনশ টি, মহানগরে ১৯০টি ও এনপিবি পিস্তল ও রিভলভার ছিল ৫৪ টি। ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলাতে জমা হয়েছে ২৭৯টি, মহানগরে ১৫৪টি। সবমিলিয়ে এখনও ১১১টি অস্ত্র বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে রয়েছে।
জেলার বিশ্বনাথে ৩০টি অস্ত্রের মধ্যে জমা হয়েছে ২৭টি, বিয়ানীবাজারে ৫৮টির মধ্যে জমা হয়েছে ৫২টি, কোম্পানীগঞ্জে ৬টির মধ্যে জমা হয়েছে ৫টি, ফেঞ্চুগঞ্জের ২০টির মধ্যে জমা হয়েছে ১৯টি, গোয়াইনঘাটে ৬টির মধ্যে সবকটি জমা হয়েছে, গোলাপগঞ্জে ৮৪টির মধ্যে ৮১টি জমা হয়েছে, জৈন্তাপুরে ১০টির মধ্যে জমা হয়েছে ৮টি, কানাইঘাটে ১৩টির মধ্যে জমা হয়েছে ১০টি, জকিগঞ্জে ৫টির মধ্যে সবকটি জমা হয়েছে, ওসমানীনগরে ৫৭টি অস্ত্রের মধ্যে জমা হয়েছে ৫৫টি, বালাগঞ্জের ১১টি অস্ত্রের মধ্যে সবকটি জমা হয়েছে।
এর আগে ২৬ আগস্ট সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সুবর্ণা সরকার স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক লোকজনকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময়ে যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে তাদের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দিতে বলা হয়।
মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে একাধিকবার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপন জারি করে লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমানে লাইসেন্সধারীদের কাছে যেসব অস্ত্র আছে, সেগুলো অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। তিনি বলেন, অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তালিকা ধরেই অভিযান চালানো হবে।
এদিকে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪৬০টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী জমা না দেওয়া অস্ত্রগুলো অবৈধ হয়ে গেছে। জমা না হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে মাঠে কাজ করবে যৌথ বাহিনী। যৌথ অভিযানে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা থাকবেন। বুধবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ৪৬০টি অস্ত্র জমা দেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এরমধ্যে অনেক সামরিক ব্যক্তি রয়েছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেজন্য জমা দেওয়া অস্ত্রের তথ্যগুলো কিছুটা গরমিল থাকতে পারে। এ বিষয়টি সমন্বয় করা হবে। সমন্বয় করার পর যারা আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেন নি সেই তথ্য অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জমা না দেওয়া অস্ত্র অবৈধ হয়ে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com