ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৯ সালের আজকের দিনে মৌলভীবাজার থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খড়িয়ালা নামক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। শেষ ইচ্ছানুযায়ী বাহারমর্দনে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করবে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ, তাঁর পরিবার ও বিএনপি। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদ ও মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর গ্রামের বাড়িতে সকালে কোরান খতম, মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বাদ জোহর মিলাদ, দোয়া ও তোবারক বিতরণ করা হবে। বিকেল ৪টায় পৌর জনমিলন কেন্দ্রে এম সাইফুর রহমান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া দলীয়ভাবে জেলা বিএনপি, উপজেলা বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মীরা মিলাদ মাহফিল, দোয়াসহ নানা কর্মসূচি পালন করবেন।
সিলেটে দোয়া মাহফিল আজ: সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে সিলেট জেলা বিএনপি। আজ বাদ যোহর শাহজালাল (র.) দরগাহ প্রাঙ্গনে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে সিলেট জেলা বিএনপি ও জেলার আওতাধীন উপজেলা-পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।
এম সাইফুর রহমান কর্মময় জীবনে অনন্য গুণে মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়ে ছিলেন। তাঁর সাদামাটা জীবন মানুষের দৃষ্টি কাড়ত। ছিল না চাওয়া পাওয়ার অস্থিরতা। কথা বলতেন সহজ সরল আর ইংরেজি মিশ্রিত আঞ্চলিকতায়। এ কারণে দেশ-বিদেশে সব শ্রেণির মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ছিল তাঁর।
মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনের এম সাইফুর রহমান দেশের অন্যতম অর্থমন্ত্রী যিনি একনাগাড়ে ১২ বার সংসদে বেশ সফলতার সঙ্গে বাজেট পেশ করেছেন। তিনি উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখতেন তা বাস্তবায়নও করতেন। এটাই তাঁর অবিচল আস্থা বিশ্বাস আর কাজের প্রতি নিখাঁদ আন্তরিকতা ও কর্তব্যকর্মে দায়িত্বশীলতার নজির। মৌলভীবাজারসহ পুরো সিলেট বিভাগেই রয়েছে তাঁর চোখ ধাঁধাঁনো উন্নয়নের ছোঁয়া।
এম সাইফুর রহমান ১৯৩১ সালের ৬ অক্টোবর মৌলভীবাজারের বাহারমর্দনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ আব্দুল বাছির, মাতা তালেবুন নেছা। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। মাত্র ছয় বছর বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। এরপর তাঁর অভিভাবক হন চাচা মোহাম্মদ সফি। শিক্ষাজীবন, গ্রামের মক্তব ও পাঠশালা শেষ করে তিনি ১৯৪০ সালে জগৎসী গোপালকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর ১৯৪৯ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। সিলেটের এমসি কলেজ থেকে আইকম পাস করে ১৯৫১ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান। সেখানে পৌঁছার পর মত পাল্টে যায় তাঁর। ব্যারিস্টারির পরিবর্তে পড়েন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি। ১৯৫৩-৫৮ সময়কালে পড়াশোনার পর ১৯৫৯ সালে ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ফেলোশিপ অর্জন করেন।
এ ছাড়া এম সাইফুর রহমান আর্থিক ও মুদ্রানীতি এবং উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষায়িত শিক্ষা গ্রহণ করেন। এরপর ১৯৬০ সালের ১৫ জুলাই বেগম দূররে সামাদ রহমানের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জনক। ২০০৩ সালে তাঁর স্ত্রী মারা যান।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্নে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে এম সাইফুর রহমান দল গঠনে অংশ নেন। এরপর তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিত হন। ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন ও ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ ও সিলেট-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
২০০৬ সালের ৮ জুন এম সাইফুর রহমান সংসদে দ্বাদশ বাজেট পেশ করে দেশের সংসদীয় ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যকবার বাজেট পেশকারী হিসেবে রেকর্ড গড়েন। তিনি দীর্ঘদিন দেশের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন ছাড়াও দেশ-বিদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গে।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com