ওয়াল নিউজ ডেস্ক
সিলেটে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের সময় ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি স্থাপনা এখনও ব্যবহার উপযোগী হয়নি। কী পরিমাণ সরকারি বেসরকারী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা-ও নিরূপণ করা হয়নি। তবে সচেতন নাগরিকদের সহায়তায় থানা-ফাঁড়ি এবং বিভিন্ন স্থাপনা থেকে লুট হওয়া কিছু মালামাল উদ্ধার হয়েছে। তবে অধিকাংশ মালামালই এখনও লুণ্ঠনকারীদের হাতেই রয়েছে। কবে নাগাদ এসব সরকারি স্থাপনা তার আসল রূপ ফিরে পাবে কিংবা সেবা কার্য চালু হবে তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।
নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, গত ৫ ও ৬ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে ছাত্রজনতার আনন্দ মিছিলের সুযোগে এক শ্রেণির সুযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্ত সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় লুটতরাজে মেতে উঠে। বিক্ষোভকারীরা যখন সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালায় তখন সেসব সুযোগসন্ধানী সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়, নির্বাচন অফিস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা পরিষদ ভবন, পুলিশ লাইন্স, লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, সোবহানীঘাট ফাঁড়ি, বন্দরবাজার ফাঁড়ি, লাউয়াই পুলিশ বক্সসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় লুট ও হামলা-ভাঙচুর চালায়। এছাড়া ফ্যাশন হাউস মাহা সহ নগরের চৌহাট্টায় কয়েকটি ফার্মেসি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এছাড়া সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধূরীর টিলাগড়ের বাসভবন, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের কার্যালয়, কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরানের কার্যালয়, কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজের বাড়ি ও কার্যালয় এবং সাবেক কাউন্সিলর আফতাব উদ্দিন খানের বাসা-অফিস, যুবলীগ নেতা আলম খান মুক্তির বাসা ও কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা বিক্ষোভকারীদের হামলায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ঘটনার পর আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনসমুহের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। নিজেদের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসব স্থাপনার নিরাপত্তায় কাজ করছেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তায় বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন।
এদিকে, মঙ্গলবার সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসা লোকজনসহ পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা স্বস্তিতে রয়েছেন। তবে বিভিন্ন স্থানে আনন্দ-উৎসবের নামে কতিপয় দুষ্কৃতকারীর হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাটের ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বুধবার নগরে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডবিরোধী প্রচারণা চালিয়েছেন। তিনি মাইকযোগে নগরবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে বলেছেন, সন্ত্রাসীরা নানা স্থাপনায় হামলা করছে। ভাঙচুর করছে। লুটপাট করছে। এসব থেকে বিরত থেকে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলায় নিয়োজিতদেরকে তিনি সহায়তা করতে হবে।
ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর যখন পুলিশ তাদের বিভিন্ন স্থাপনায় ফিরতে শুরু করে তখন বিভিন্ন এলাকার সচেতন নাগরিকরা নানাভাবে সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে লুট করা মালামাল ও অস্ত্র ফেরত দিতে উৎসাহিত করেন। ফলে সিলেট নগরের কোতোয়ালি থানা, লামাবাজার ফাাঁড়ি থেকে লুট করা অস্ত্র, গাড়িসহ কিছু মালামাল ফেরত পেয়েছে পুলিশ।
মেট্রোপলিটন পুলিশ ও কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা যায় এ পর্যন্ত ৭৭ টি আগ্নেয়াস্ত্র তারা ফেরত পেয়েছেন। তবে কী পরিমাণ অস্ত্র ও গুলি লুট কিংবা খোয়া গেছে তারা এখনও নিরূপণ করতে পারেননি। যতটুকু ফেরত পেয়েছেন তা-ই তারা তালিকাভুক্ত করছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. সাইফুল ইসলাম বুধবার দৈনিক জৈন্তাবার্তাকে বলেন, কোথায কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেটি নিরূপণ করছে গণপূর্ত বিভাগ। পুলিশের বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি কিংবা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা থেকে যেসব অস্ত্র ও মালামাল কিংবা কাগজপত্রাদি খোয়া গেছে সেগুলোরও তালিকা হচ্ছে। সব তালিকা পাবার পর এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। স্বেচ্ছায় অনেকে জমা দিয়েছেন। এর বাইরে যা আছে সেগুলোর ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানতে চাইলে সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সুবর্ণা সরকার বলেন, আমরা ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণের চেষ্টা করছি। তবে এখনও সবগুলো রিপোর্ট আসেনি। কেউ কেউ স্ব-ইচ্ছায় মালামাল ফেরত দিচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক।
প্রধান সম্পাদক: জাকেরিন চৌধুরী জয়
অফিস: ১০৪/১১ নূরানী বনকলাপাড়া,
সুবিদ বাজার সিলেট।
মোবাইল : ০১৬০১০৩৮৪৮১, Email: thewallnews181@gmail.com