ওয়াল নিউজ ডেস্ক:
নোয়াখালীতে টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এখনও জেলার ৮টি উপজেলার ৮৭টি ইউনিয়নের ২১ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দি। এক হাজার ৩০৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতের সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪৩ জন। আবার নতুন করে অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হচ্ছেন। তবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে কথা বলে জানা গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নতুন করে মানুষ ওঠার জায়গা নেই। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পানিবন্দি জীবন পার করছেন।
মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতের বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অপরদিকে, জেলার দুর্গম অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। ত্রাণ পেতে হাহাকার করছেন বন্যার্তরা।
স্থানীয়রা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিল উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। আর জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকেন্দ্রের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে নতুন করে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও জেলায় বৃষ্টিপাতের সম্ভবনা রয়েছে।’
বেগমগঞ্জের বাসিন্দা দিদার হোসেন বলেন, ‘গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে বেশি কষ্টে আছে। কিন্তু চলাচলের পথ দুর্গম হওয়ায় আমরা ত্রাণ পাচ্ছি না। প্রশাসনের সঙ্গে ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় না থাকায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।’
কবিরহাটের কালামুন্সি উচ্চবিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এই আশ্রয়কেন্দ্রে ছোট একটি কক্ষে ৬টি পরিবার গাদাগাদি করে থাকছে। এর মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে অনেকে নতুন করে আসছেন থাকার জন্য। কিন্তু জায়গা নেই থাকার।’
কোম্পানীগঞ্জের রানা নামে এক যুবক জানান, তার বাবা হার্টের রোগী। বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় সেখানে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। বসুরহাট বাজারে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য রিকশা নিয়ে ঘুরছেন। এ পরিস্থিতিতে বাসা ভাড়া পাওয়াও কঠিন বলে জানান তিনি।
সেনবাগ উপজেলা ইমরান হোসেন নামে এক যুবক জানান, উপজেলার বীজবাগ ইউনিয়নের অনেক এলাকায় এখনও ত্রাণ পৌঁছেনি। মানুষ না খেয়ে খুব কষ্টে আছে। সবারই ঘরের ভেতর পানি।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নোয়াখালীতে ত্রাণ নিয়ে এসে বিপাকে পড়ছেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী। প্রশাসনের সঠিক নজরদারি না থাকায় স্বেচ্ছাসেবীদের মারধর করে ত্রাণ লুটপাটেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘নোয়াখালীর অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। খাদ্যসংকট চরমে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। সমাজের বিত্তবানদের আরও বেশি নোয়াখালীর বাসিন্দাদের সহযোগিতা করা প্রয়োজন।’